প্রকাশিত: ১৭/০৫/২০১৮ ১:৫৬ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৫২ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম : প্রত্যেকেরই স্বপ্ন আছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধি, আত্মনির্ভরতা ও আরো ভালো ভবিষ্যতের। এটি খারাপ কিছু নয়, বরং আমাদের অধিকার,’ আট সন্তানের জননী এক রাখাইন মা বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বললেন।

বিধবা আয়াতুল, ৫৪, ২০ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের প্রধান। তারা কক্সবাজারের বালুখালি উদ্বাস্তু শিবিরের অস্থায়ী চারটি বাড়িতে বাস করছেন।  মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানের প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালের নভেম্বরে পরিবারটি বাংলাদেশে পাড়ি দেয়। ক্যাম্পে তারা বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যে টিকে আছে।  তার তিন মেয়ে ও তিন ছেলে রাখাইন ছেড়ে আসার আগেই বিয়ে করেছিল। তার স্বপ্ন এখন তার অবিবাহিত ছেলেদের নিয়ে। এসব ছেলে সৌভাগ্যবশত মানবপাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

তিনি জানান, কয়েক মাস আগে এক লোক রাতে এসে বলল, আমার সন্তানদের তারা বিনা পয়সায় বিদেশে পাঠাতে চায়। আমি ভেবেছিলাম লোকটি ভালো মানুষ, আমাদের কল্যাণ চায়। আমরা একমত হয়েছিলাম। কিন্তু ওই লোকটি আর আসেনি।  আয়াতুলরা আবার মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। ফলে তারা এখন উদ্বাস্তু শিবিরের সামান্য আয় দিয়ে যেকোনোভাবেই হোক না কেন সংগ্রাম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি জানান, আমরা যখন এখানে প্রাণ নিয়ে এখানে এসেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম, অল্প দিনেই বাড়িতে ফিরতে পারব। কিন্তু এখন তা দূরের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে, কোনো দিনই মাংডুতে আমাদের বাড়িতে ফিরতে পারব না।খবর উখিয়া নিউজ ডটকমের

তিনি বলেন, সাহায্য দিন দিন কমে আসছে। আমরা যদি আয় বাড়াতে পারি, তবে টিকে থাকতে পারব। শিবিরে সামান্য কিছু সুযোগসুবিধা আছে। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমাদের অবস্থার উন্নতি করতে পারব।

খুবই সম্ভাবনা রয়েছে, যে লোকটি আয়াতুলের বাসায় গিয়েছিল, সে আসলে আদম পাচারকারী দলের সদস্য। এ ধরনের লোকজন কক্সবাজারে খুবই সক্রিয়।  রোহিঙ্গা ও গরিব বাংলাদেশীদের নৌকায় করে সাগর পাড়ি দেওয়ার ঘটনাটি ২০১৫ সালে মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে অসংখ্য গণকবর পাওয়া গেছে। আদম পাচারকারীরা তাদের নানা কঠিন কাজে লাগায় কিংবা মুক্তিপণ আদায় করার কাজে ব্যবহার করে।  তবে তাদের দমনের জন্য মালয়েশিয়া ও থাই সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

আদম পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া একজন হলেন মোহাম্মদ আরমান। বয়স ২৬। ২০১৪ সালে তিনি আদম পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিলেন।  তিনি ছিলেন মোহাম্মদ আক্কাসের (৭০) ছোট ছেলে। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। তারা ছিলেন কুতুপালঙ উদ্বাস্তু শিবিরের।  স্থানীয় এক বাঙালি তাকে মালয়েশিয়ায় চাকরির টোপ দিয়েছিল। তিনি ২০ হাজার টাকা যোগার করে দালালদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। তাকে নৌকায় ওঠানো হলো।  পাঁচ দিন পর আক্কাস একটি ফোন কল পেলেন। তাকে বলা হলো, ছেলেকে পেতে হলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। তা না হলে জঙ্গলে তাকে হত্যা করা হবে।  আক্কাস বলেন, আমি কোনোভাবে ৩০ হাজার টাকা যোগার করে মুক্তিপণ দেই। দুই সপ্তাহ পরে তারা আমার ছেলেকে মুক্তি দেয়। ট্রলারে করে রাতের বেলায় ছেলেটিকে কোথায় নেওয়া হয়েছিল, তা সে বলতে পারে না।  এই বুড়ো লোকটি চান না আর কারো জীবনে এমন ঘটনা ঘটুক।  তিনি বলেন, আমি আর কখনো আমার কোনো ছেলেকে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠাব না।

কক্সবাজার নাগরিক সমাজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, অবৈধ আদম পাচার ও অসামাজিক কাজের জন্য রোহিঙ্গাদের টোপ দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি।  বিশেষ করে রোহিঙ্গা মেয়ে ও নারীরা এ ধরনের অপরাধের শিকার হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, বাঙালি মুসলিম ও রোহিঙ্গা উভয় নারীরাই বোরকা পরে। ফলে রোহিঙ্গা নারীদের বোরকা পরিয়ে পাচার করা সহজ হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় সরকারের সাথে এ নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।

নজরদারি জোরদার

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের বলেন, আদম পাচার, মাদক পাচার ও ডাকাতির মতো অপরাধ দমনের জন্য কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ক্যাম্পগুলোতে পাঁচটি অস্থায়ী পুলিশ চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দারাও নজরদারি চালাচ্ছে।  তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই অর্ধ ডজন বাঙালি ও রোহিঙ্গা আদমপাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দমন অভিযান চলছে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তার নার্সদের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু

কক্সবাজারের বেসরকারি ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের ভুল চিকিৎসায় মারা গেলো মহেশখালীর আফসানা হোসেন শীলা ...

টেকনাফ সীমান্তে সর্ববৃহৎ মাদকের চালান লুটপাট শীর্ষক সংবাদে একাংশের ব্যাখ্যা ও প্রতিবাদ

গত ১৯ এপ্রিল টেকনাফ সীমান্তের জনপ্রিয় অনলাইন টেকনাফ টুডে এবং গত ২১এপ্রিল টিটিএন সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন ...